কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে তীব্র ভাঙনের ফলে যাত্রী-চালকদের পোহাতে হচ্ছে ব্যাপক ভোগান্তি। সড়ক দূর্ঘটনা এখন এই সড়কটিকে নিয়মিত এবং স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। এসব দূর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই,আহত হয়ে হাত-পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হচ্ছেন কেউ কেউ। সড়কে ভাঙনের ফলে যান চালকদের যাতায়াতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। সেই সময়ের ঘাটতি মেটাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে প্রায়শই ঘটে যাচ্ছে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। এছাড়াও সড়কে ছোট বড় গর্তের ফলে প্রায়ই মালবাহী বিভিন্ন ট্রাক উল্টে রাস্তায় কিংবা খাদে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কিশোরগঞ্জ-ভৈরব হাইওয়ে সড়কটি ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত। সর্বশেষ ২০২০ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) রাস্তাটি আঞ্চলিক হাইওয়ে হিসেবে নির্মাণ করে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অতি নিম্নমানের কাজের ফলে বছর চারেক পেরোতেই রাস্তাটির অধিকাংশ জায়গা গর্ত,উচু-নিচু,ফুলে-ফেঁপে কার্পেটিং উঠে গিয়ে যাতায়াত অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিশোরগঞ্জ অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কটি প্রশস্ত ও কার্পেটিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করে৷ ৫৬ কিলোমিটার সড়কের জন্য দুটি প্রকল্পে ১৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে। কাজ শেষ হওয়ার তিন বছর না পেরোতেই সড়কের নাকাল অবস্থা৷ তবে মহাসড়কটি প্রশস্ত করে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে সড়কটি যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়,কটিয়াদী পৌর সদরের চরিয়াকোনা এলাকা থেকে শুরু করে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাজিতপুরের পিরিজপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক ভাঙনে জরাজীর্ণ অবস্থা থাকার ফলে এখানে নিয়মিত ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে। ভাঙনের ফলে সড়কে যাতায়াতে সৃষ্টি হয় কচ্ছপের গতি। যার ফলে প্রায়ই এখানকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লেগে থাকে ছোট বড় জ্যাম। যাত্রীদের পড়তে হয় দীর্ঘ সময়ের ভোগান্তিতে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় যাত্রীবাহী তিন চাকার যান উল্টে যাওয়া,মালবাহী ট্রাক খাদে পড়ে যাওয়া,সৃষ্ট গর্তে পড়ে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা সহ নানা দূর্ঘটনার কবলে পড়ছেন যাত্রীরা। আর এসব দূর্ঘটনা থেকে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই।
এদিকে রাস্তার এই বেহাল দশা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রায়ই এসব গর্তে ইট,বালুর ঢালাই,ছোট পাথর ও বিটুমিন দিয়ে গর্ত ভরাট,ফুলে-ফেঁপে যাওয়া সড়ক ভেঙে সমান করতে দেখা গেলেও কয়েক ঘন্টা পেরোতেই সেসব অস্থায়ী কাজ ভেস্তে যায়। অস্থায়ী অচলাবস্থা থেকে সড়কে যাতায়াতে উপযোগী করার চেষ্টা করলেও ভোগান্তি বাড়ে দ্বিগুণ।
সড়কে যাতায়াতে চালকেরা বলছেন, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব এই আঞ্চলিক সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক৷ রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী সিলেট,চট্টগ্রাম,ময়মনসিংহ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ বানিজ্যিক অঞ্চলগুলোতে মালামাল পরিবহনে অন্যতম সড়ক হিসেবেই ব্যাবহৃত হয় ব্যস্ততম এই সড়কটি। দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কের এই বেহাল দশার ফলে তাদেরকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এসব ছোট বড় গর্ত দিয়ে গাড়ি চালানোর পর প্রায়ই সড়কে মালবাহী গাড়ি উল্টে যায়। এছাড়াও ভাঙন কিংবা গর্তে পড়ে বিভিন্ন সময় তাদের যান অকেজো হয়ে পড়ে রাস্তায়।
অন্যদিকে যাত্রীরা বলছেন, শত কোটি টাকা ব্যায়ে মহাসড়কটি নির্মানের পর আশার আলো দেখছিলেন তারা। তবে কয়েক বছর পেরোতেই রাস্তাটির অচলাবস্থা দেখে এখন রীতিমতো হতাশ হতে হচ্ছে তাদেরকে। রাজধানী সহ সিলেট,চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বানিজ্যিক এলাকায় যাতায়াতের জন্য সড়কটি প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সম্প্রতি এই ভাঙনে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরদারিতা নেই বললেই চলে। এই সড়কটি স্থায়ী সংস্কার করে যাতায়াত উপযোগী করে তোলা এখানকার যাত্রীদের সময়ের দাবী।
এদিকে কটিয়াদী হাইওয়ে থানার পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে ছোট বড় দূর্ঘটনায় ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এসব দূর্ঘটনায় সড়কেই প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। এছাড়াও এসব দূর্ঘটনা থেকে আহত হয়েছেন আরোও ৩০ জন মানুষ । হাইওয়ে পরিসংখ্যানের বাইরে বেশ কয়েকটি ছোট বড় দূর্ঘটনার কবলে হতাহত হয়েছেন অনেকেই।
স্থানীয়রা বলছেন, উঁচু-নিচু,ভাঙা সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। মালবাহী ট্রাক,তিন চাকার ছোট যান,মোটরবাইক সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রায়শই সড়কটিতে দূর্ঘটনার শিকার হতে দেখা যায়। আর এসব দূর্ঘটনায় সড়কের এই অব্যাবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন তারা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেষ বড়ুয়া গ্রাম বাংলা টিভিকে জানান, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের কটিয়াদী থেকে পিরিজপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ রয়েছে। সেটা মেরামত করার জন্য পিএমপি মেজর থেকে অনুমোদিত হয়েছে, অর্থ বরাদ্দ হয়েছে এবং দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার আসলেই কাজ শুরু হবে এবং জনদূর্ভোগ লাঘব হবে৷