সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকির ঐতিহ্য: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আরেকটি লোকজ স্মৃতির ম্লান অধ্যায়

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
বাংলার লোকজ সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ ঢেঁকি। একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি বাড়িতে ছিল এই কাঠের যন্ত্র। ধান ভানা, চাল কোটাসহ নানা কাজে ঢেঁকির ছিল অপরিসীম ব্যবহার। আর সেই ঢেঁকির তালে গৃহবধূদের কণ্ঠে ভেসে আসত মধুর গান।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে একসময় প্রতিটি গ্রামে ছিল ঢেঁকি। সাহেবের চর, আড়াইবাড়িয়া কিংবা পৌরসভার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিল এই ঐতিহ্যের চর্চা। বধূ-ঝিরা থেকে শুরু করে কিশোরীরাও মেতে উঠত ঢেঁকির তালে। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় ঢেঁকি ধীরে ধীরে হয়ে পড়েছে অপ্রয়োজনীয়।

লোকজ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, আধুনিক রাইচ মিল ও শ্যালো ইঞ্জিনের ব্যবহার গ্রামীণ জীবন থেকে ঢেঁকিকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। এখন আর গ্রামাঞ্চলেও ঢেঁকি চোখে পড়ে না। দু-একটি ঢেঁকি হয়তো কোনো উঠানের কোণে পড়ে আছে, যা কেবল উইপোকার বাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাহার উদ্দিন ও খলিল মিয়ার মতো কিছু লোক নিজেদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের তাগিদে ঢেঁকি রাখলেও তা এখন কেবল স্মৃতির অংশ। ঢেঁকিতে তৈরি চালের ভাত, চিড়া, পিঠার স্বাদ আজও মানুষ ভুলতে পারেনি। চিকিৎসকদের মতে, ঢেঁকিছাঁটা চালে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল হিসেবে গ্রামের নারীদের শারীরিক পরিশ্রম কমেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে এক সুমধুর ঐতিহ্য, যা কেবল আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিরই অংশ নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা বাঙালির ইতিহাসের অংশও।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, ঢেঁকির মতো ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সচেতনতা বাড়ানো দরকার। নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো কেবল গল্প বা বইয়ের পাতায়ই এই ঐতিহ্যের কথা জানতে পারবে।

যান্ত্রিক উন্নতি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, তবে সেই সঙ্গে গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্যের এক অনবদ্য অধ্যায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ঢেঁকি আমাদের শিকড়, যা টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page