সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

ব্যানারে শেখ হাসিনার ছবি রেখে বিএনপি নেতার বই বিতরণ

নোয়াখালীর চাটখিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত ব্যানার দিয়ে বই বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতা মো. তাজুল ইসলাম। তিনি নিজেই সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। মুহূর্তের মধ্যে বই বিতরণের ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। এতে মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইচ্ছে করেই এমনটা করা হয়েছে বলে দাবি করে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বিচার দাবি করেন তিনি।

বুধবার (১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে চাটখিল পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বই বিতরণ অনুষ্ঠান করা হয়।

তাজুল ইসলাম চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি চাটখিল সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন সৌদি আরব থাকার পর তিনি দেশে এসেছেন। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন বিএনপির পদপ্রত্যাশী।

জানা যায়, উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে বুধবার শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়। বই উৎসব না হলেও কিছু বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিরাও অংশ নেন। বুধবার সকালে বিএনপি নেতা তাজুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন। তারপর সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়েন। ব্যানারে শেখ হাসিনার ছবি থাকায় নেটিজেনরা বিরূপ মন্তব্য করেন। তাৎক্ষণিক আরেকটি পোস্টের মাধ্যমে তাজুল ইসলাম সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি জানান। যদিও তিনি নিজেই সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বই বিতরণ করছিলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমি গিয়েছি শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে। তারপর বই বিতরণ করার সময় হলে স্মৃতি রাখার জন্য মেয়ের হাতে বই তুলে দিই এবং সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করি। আমার ফেসবুকে তখন শেখ হাসিনার ছবি ব্যানারে আছে বলে সবাই মন্তব্য করতে থাকে। আমি ব্যানারটি আগে খেয়াল করিনি। কাউকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যে আমি এই ছবি ফেসবুকে ছাড়িনি। ব্যানারে শিক্ষা কর্মকর্তার নাম থাকায় আমি সবার বিচার দাবি করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার পোস্ট দেখে শিক্ষকরা আমার বাসায় আসেন। ফেসবুকের পোস্ট সম্পর্কে জানতে চান। তারপর যখন শিউর হলাম ব্যানারটি পুরাতন তখন পোস্টটি ডিলিট করে দিই। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এখানে কিছু করি নাই। স্মৃতি রাখার জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় এটি ভাইরাল হয়ে যায়।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া আফরোজ বলেন, ‘তাজুল ইসলাম আমাদের শিক্ষার্থীর অভিভাবক। আমরা জানতাম না তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজে ফেসবুকে ছবি ছাড়ায় বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। আবার সেই তিনিই আমাদের বিচার দাবি করেছেন। মূলত আমরা গত বছরের ব্যানার দিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। যে কারণে এমনটা হয়ে গেছে। আমাদের নতুন বছরের বই বিতরণের জন্য ব্যানার করার কোনও বরাদ্দ বা নির্দেশনা ছিল না।’

এ বিষয়ে চাটখিল উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শাহজাহান রানা বলেন, ‘তাজুল ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আমাদের আহ্বায়ক ও আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তারপর বিষয়টি তিনিই আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন। ব্যানারে শেখ হাসিনার ছবি রেখে এভাবে বিএনপির কেউ বই বিতরণ করতে পারেন না। তাজুল ইসলামের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমার আহ্বায়ক ওমরাহ করার জন্য দেশের বাইরে আছেন। উনি আসলে আলাপ করে তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চাটখিল উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল হান্নান পাটওয়ারী বলেন, ‘বই বিতরণে কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা ছিল না। সুন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিগত প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ ব্যানার দিয়ে বই বিতরণ করে। সেই ব্যানারে যে শিক্ষা অফিসারের নাম দেওয়া তিনি মারা গেছেন। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page