কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাস। অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছিলেন তিনি। এমন অভিযোগ থাকার পরও নীরব ভূমিকায় দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। এরইমধ্যে অভিযোগ আসে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নে আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করছেন মিনতি দাস। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গেলে বোবার অভিনয় করেন মিনতি। কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকেন তার চেয়ারে।
তথ্য বলছে, সদর উপজেলার মারিয়া মৌজাস্থ আরএস ৮৫৩ খতিয়ানের মালিক জুবেদা খাতুন আরএস ৩৯০৫ দাগে ২০১০ সালের ১৯ জুলাই ৮১৮২ নম্বর দলিলে আরএস ৩৭৬৪ দাগে ২৫ শতাংশ ভূমি তার ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর কাছে সম্পাদন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রি করে দেন। মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের সেই জায়গায় জুবেদা খাতুনের অপর ছেলে আবু হানিফ ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট রেজিস্ট্রিকৃত দলিল নম্বর ৬৮৯৭ হেবা ঘোষণা করে নিজে জমির মালিক দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মোমতাজ উদ্দিন আদালতে মামলা করেন। আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উল্লিখিত জমিতে দু’পক্ষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিবাদমান জমির মোট পরিমাণ ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ জমি ১৯৯০ সালে মা জুবেদা খাতুন তার ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুকে দিয়ে দেন। পরে ওই জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। বাকি জমি মোমতাজ উদ্দিনের কাছে থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আবারো ২৫ শতাংশ জমি মোমতাজ উদ্দিনকে লিখে দেন জুবেদা খাতুন। শুরু থেকেই জমির দখলে ও খাজনা দিয়ে আসছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। সব কিছু ঠিক থাকলেও কৌশলে দলিল করে নিজের বলে দাবি করেন মোমতাজ উদ্দিনের সহোদর ভাই আবু হানিফ। বিষয়টি জানতে পেরে আদালতের দারস্থ হোন মোমতাজ উদ্দিন।
আদালতে মামলার কাগজ ও আদেশ পর্যালোচনা করে জানা যায়, আবু হানিফ হতে নালিশি জমি দখলের সমর্থনে কোনো কাগজাদি দাখিল হয়নি। ফলে নালিশি হেবা দলিলমূলে আবু হানিফ আদৌ দখলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কিনা এই মর্মে সন্দেহ তৈরি হয়। ফলে নালিশি জমি সংক্রান্তে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর তর্কযোগ্য মোকদ্দমা রয়েছে বিধায় নালিশি জমি অন্যত্র হস্তান্তর করা হলে কিংবা এর আকার আকৃতির পরিবর্তন করা হলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর অপূরণীয় ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। কাজেই সুবিধা-অসুবিধার ভারসাম্য মোমতাজ উদ্দিন মন্তুর অনুকূলে ও আবু হানিফের প্রতিকূলে। এমতাবস্থায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আবু হানিফকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল বর্ণিত জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। আদালতের নিষেধাজ্ঞার সেই নোটিশ আবু হানিফের পাশাপাশি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ৩৮ লাখ টাকা মূল্যে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন আবু হানিফ এবং চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাফকাওলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোমতাজ উদ্দিন মন্তু বলেন, এই জমিটা আমি কয়েক যুগ ধরে ভোগদখল করে আছি। আমার মা আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন। যখন মা লিখে দিয়েছেন তখন জমিটার দাম ছিল না। কারণ পুরো জমিটা গর্ত ছিলো। এখন দাম বেড়েছে। আমার ভাই আমার সঙ্গে জালিয়াতি করেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কিভাবে জমি বিক্রি করেছে জানি না। আর নিষেধাজ্ঞার কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেও দেওয়া আছে। তারপরও কিভাবে দলিল করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। দলিল লেখকের কাছেও গিয়েছি কোনো সমাধান না পেয়ে আদালতকে আবার জানিয়েছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
জমি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আবু হানিফ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্রি করায় আমি ভুল করেছি। আর এ কারণে আমি ঠকেছিও। আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি। এখন সমাধান করতে চাই।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের কাছে। এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলবেন না বলে তিনি জানান। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া ও অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার বলা হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।