রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ‘কালবেলা’ পত্রিকার প্রতিনিধি বদরুল আলম গ্রেপ্তার: সমাজসেবক ও সাংবাদিককে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরায় জনমনে প্রশ্ন কিশোরগঞ্জে মুখে কা‌লো কাপড় বেঁধে আ. লীগের ঝটিকা মিছিল পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কিশোরগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে প্রতিপক্ষের হামলা আহত ৭ ভৈরবে যাত্রী সেজে গাঁজা পাচার: ২ নারী আটক কিশোরগঞ্জে শিক্ষকের ভুলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না ১০ শিক্ষার্থী ভৈরবে ৪২ লক্ষাধিক টাকার গাঁজসহ দুই মাদককারবারি আটক ভৈরবে ভিন্ন ধর্মের নারী পুরুষ গ্রেফতার কিশোরগঞ্জে আন্দোলনে মিছিলে হামলা মামলার আসামির কারাগারে মৃত্যু কুলিয়ারচরে ঈদের দিন ঘুরতে বের হয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত

রাজশাহীতে ফুটছে আমের মুকুল, ঘন কুয়াশায় ক্ষতির শঙ্কা চাষিদের

শীতকাল শেষ না হতেই রাজশাহী অঞ্চলের আমবাগানগুলোতে এবার আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। অনেক আমবাগান মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। তবে অতি শীতল আহবাওয়া ও শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা দেখছেন আমচাষিরা।

যদিও উৎকণ্ঠিত চাষিরা শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশা থেকে মুকুল বাঁচাতে বাগানগুলোতে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন। নিয়মিতভাবে আমবাগানগুলোতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা।

আমচাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমের ফলন আশানুরূপ হয়নি। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোতে কিছু সময় আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে রাজশাহীর বাগানগুলো মুকুলিত হলেও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাগানগুলোতে দুই-একটি করে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে।

রাজশাহীর উপকণ্ঠের কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ আমগাছ মুকুলিত হয়েছে। আবার কোথাও ৫০ শতাংশ গাছে মুকুল ফুটেছে।

কয়েকজন বাগান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমগাছে মুকুল আসা শুরু হতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে উঠেনি।

রাজশাহীর বড়গাছি এলাকার বাগান মালিক বাবলু সরকার বলেন, এখনো রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা ও কনকনে ঠাণ্ডার প্রকোপ কমেনি। সূর্যের তাপ প্রায় নেই বললেই চলে। গত কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি। এসব কারণে আগাম মুকুল নিয়ে চাষিদের শঙ্কা কিছুটা বেড়েছে। রোদের তাপ না পেলে এবং বেশি সময় ধরে প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুল ঝরে পড়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। এতে আমের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই শীতের মধ্যে আবার বৃষ্টি হলে দ্রুত কুয়াশা কেটে যাবে। তাতে বরং আমচাষিদের জন্য আশীর্বাদ হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এবার বাগানগুলোতে কিছুটা আগে আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। অনেক বাগানে আমগাছগুলোর অধিকাংশই মুকুলিত হয়েছে। তবে ঘন কুয়াশা বেশি দিন থাকলে মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা আছে। শীতের তীব্রতা মুকুলের জন্য কোনো শঙ্কার কারণ নয় তবে ঘন কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়। কুয়াশার কারণে আমগাছে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। মুকুলের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য চাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এবার আমের ফলন কিছুটা বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগানগুলোতে গাছে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। আগাম মুকুল এলে কুয়াশার কারণে ক্ষতির শঙ্কা থাকে। গত মৌসুমে বাগানগুলোতে ভালো মুকুল এলেও তা ঝরে পড়ায় আম উৎপাদন হ্রাস পায়। এবার ভালো ফলনের আশা করছি। কুয়াশা ছাড়াও ঝড় বৃষ্টিতে মুকুলের ক্ষতি হয়। বাকিটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। আর সামনে কিছুদিনের মধ্যে বাগান কেনাবেচা শুরু হবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল এসেছে। গত বছর মুকুল এলেও কুয়াশার কারণে মুকুলের বেশি ক্ষতি হয়েছিল। ফলে ফলনও কম হয়েছিল। এবার বেশি মুকুল হবে বলে আশা করছি। আর চাষিদের গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছি।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন বলেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বড় আমগাছে কোনো বছর মুকুল কম এলে পরের বছর বেশি আসে। সেই হিসাবে বড় গাছগুলোতে মুকুল এবার বেশি আসার কথা। আর ছোট গাছ যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রোপণ করেন তারা যথাযথ যত্ন নেন। এ কারণে ছোট বাগানগুলোতে সব মৌসুমেই মুকুল বেশি হয়। এবারের আবহাওয়া আমের জন্য এখন পর্যন্ত উপযোগী আছে। আর দীর্ঘ কুয়াশার কবলে পড়লে চাষিদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এখন আম চাষিরা অনেক বেশি সচেতন। আশা করি তারা মুকুল রক্ষায় প্রতিষেধক ছিটাবেন। এতে মুকুল রক্ষা পাবে। আমের ফলনও ভালো হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page