জয়নাল আবেদীন রিটন, ভৈরব: ভৈরবের বেদে পল্লীতে নেই ঈদের আমেজ। অনেকের ঘরেই রয়েছে খাবারের সংকট। রোজা রেখে একদিন যে ভালো কিছু দিয়ে ইফতার করবে সে সামর্থ্যও নেই। ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসলেও এখানকার বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে নেই ঈদের আনন্দ। অপরদিকে রয়েছে পানি আর টয়লেটের সমস্যা। পলিথিন আর বাঁেশর খুঁটি দিয়ে খোলা জায়গায় তৈরি করা হয়েছে টয়লেট যা দেড় শতাধিক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয়। রমজান মাস হওয়াতে আমাদের এখন কোনো কাজ কাম নেই। কাজে গেলে ২ থেেেক ৪ শত টাকা কেউ রোজী করতে পারে আবার অনেকেই তা পারেনা। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে বেচে আছি। রোজা রাখার পর যে ভাল মন্দ কিছু দিয়ে একবার ইফতার করব সে সাধ্যও নেই। তাই আজ আমরা সবাই চাঁদা তুলে একটু ভাল মন্দ ইফতারের আয়োজন করছি। হয়তো আজ সবাই আমাদের সাধ্যমত একটু ভাল ইফতার করতে পারবো। তাতেই আমাদের আনন্দ। আর ইদের কথাতো ভাবাই যায়না।নিজেরাতো দুরের কথা বাচ্চাদের জন্য যে নাম মাত্র টাকায় একটা জামা কিনে দেব সে সামর্থ্যও নেই বলে জানান পল্লীর কয়েকজন নারী।
ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের নিকটবর্তী হাইওয়ে থানার পাশেই বেদে সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক লোকের বসবাস। এই পল্লীর ৪০ টি পরিবারের সবাই মুসলমান। প্রায় ৮ বছর আগে কয়েকটি পরিবার বসবাস শুরু করলেও সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে ৪০ পরিবার বসতি করছেন। কয়েক বছর আগে তাদের জন্য পুর্বে ২ টি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করলেও এখন আর তাতে চলছেনা। পল্লীতে লোকজন বেড়ে যাওয়ায় গোসল কাপড় চোপড় ধোঁয়া মুছা থেকে শুরু করে সাংসারিক কাজকর্ম সারতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার লোকদের। গোসল করতে গিয়ে লাই ধরে দাড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। অপর দিকে দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। রোজার মাসে কাজ কম থাকায় অনেকেই অলস সময় পার করছেন। আর কদিন পরেই ঈদ। ঈদে বাচ্ছাদের জন্য যে একটি নতুন জামা কিনবে সেই সামর্থ্য নেই তাদের। এ পল্লীতে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। পানির অভাবে সময় মত ওজু নামাজ ও গোসল করতে পারছেনা এখানকার মানুষ। এ মাদ্রাসায় প্রায় ৪০ জন ছাত্র ছাত্রী আরবি বাংলা লেখা পড়া করছে। বেদেণীরা সাপ খেলা আর তাবিজ কবজ বিক্রি করতে এখন আর মানুষের মাঝে তেমন সাড়া পাচ্ছেননা। পরিবারের ভরণ পোষণ করতে বংশগত পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকছে। তবে কিছু কিছু বেদেনীরা এখনো পাড়া মহল্লায় হেটে হেটে সিংগা লাগানো,ঝাড় ফোঁক আর তাবিজ কবজ বিক্রি করতে দেখঅ যায়। তবে মানুষ এখন আর ঝাড় ফোঁক আর তাবিজ কবজে বিশ^াস করেনা বলে বেদে সম্প্রদায়ের মাঁেঝ দেখা দিয়েছে অর্থ কষ্ট।
জরিনা বেগম বলেন, আমরা এখানে থাকি ঠিকই। কিন্তু আমাদের পানি আর টয়লেটের বড় সমস্যা। পলিথিন আর বাঁশদিয়ে ছোট্ট খুপরি ঘর তৈরি করে বসবাস করি। তাতে আমাদের কোনো সমস্য নেই এভাবে থাকতে আমরা অব্যস্থ্য। কিন্তু মাত্র ২ টি কর দিয়ে আমাদের সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়না। আর টয়লেট নেই বলে কাগজ দিয়ে কোনো রকমে টয়লেট বানিয়ে তা ব্যবহার করছি।
রওশন আরা বলেন, আজ রোজার ১৫ দিন। একদিন ভালমন্দ একটু ইফতারও মুখে দিতে পারি নাই। যা রোজী হয় তা দিয়ে চাল ডালই কেনা যায়না। বছরে একটা ঈদে যে বাচ্চাদের একটা জামা কিনে দেব তাও সম্বব না।
শাহিনুর আক্তার বলেন, বড় ছেলেটা বিয়ে করে বউ নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। স্বামী অশুস্থ কয়েক বছর যাবত। তার চিকিৎসাতো দুরের কথা খেয়েই বাচিনা। ছোট ছেলেটা গানবাজনা করে কয়েকটা টাকা রোজী করে আনলে তা দিয়ে সংসার চালাই। শিশু মেয়েটাকে যে ২০ টাকা দিয়ে ১ টা প্যন্ট কিনে দেব তাও পারবোনা।
আছিয়া খাতুন জানান, আমরা টয়লেট আর পানির জন্য অনেক কষ্টে আছি। ২ টি কলে কাপড় চোপর ধোয়া মুছাসহ গোসল করতে অনেক সময় লাগে। এমনি দিনও যায় ভীড়ের কারনে গোসল এবং সাংসারিক কাজ শেষ করতে পারিনা। রোজার মাসে আমাদের কোনো কাজ নেই। বাড়িইে বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। যদি কেউ দয়া করে আমাদের কষ্টের কথা ভেবে সহযোগিতার হাত বাড়াত তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম।
পল্লীর মাদ্রাসার ঈমাম মো, খায়রুল ইসলাম বলেন, এ মাদ্রাসায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের বাবা মা সারা দিন বাহিরে থাকলেও ছেলে মেয়েদের জন্য এখানে কোরান শিখার জন্য পাঠিয়ে দেন। এখানকার নারী পুরুষ সবাই গোসল আর টয়লেটের সমস্যায দীর্ঘদিন যাবত দুর্ভোগে রয়েছে। মাদ্রাসার জন্য একটি ওজুখানা আর টয়লেটের খুবই জরুরী।
ফিরোজ মিয়া বলেন, বহু বছর যাবত আপনাদের এখানে পড়ে আছি। এখানে রয়েছে আমাদের দেড় শত মানুষ। আমাদের জন্য পর্যাপ্ত টিউবওয়েল ও টয়লেট দরকার। আপনারা যদি কেউ পারেন তাহলে টিউবওয়েল আর টয়লেটের ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের অনেকেই পানির অভাবে সময় মত ওজু করতে পারছে না। গোসল করতে পারছেনা। এখানে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। প্রায় ৪০ জন ছাত্র ছাত্রী আরবি বাংলা লেখা পড়া করছে। আমরা আপনাদের জন্য দোয়া করব।
সরদার আতাউর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ৪ টি পরিবারে প্রায় শতাধিক লোক বসবাস করে। আমাদের ৪০ পরিবারের জন্য জন্য রয়েছে মাত্র ২ টি টিউবওয়েল। যা আমাদের জন্য খুবই কম। এখানে কোনো নদী বা খাল বিল নেই যাতে করে গোসল আর ধোয়া মুছার কাজ সারতে পারে। একজন পানি নিতে টিউবওয়েলে আসলে আরো ৫ থেকে ৭ জন দাড়িয়ে থাকে। এখন রমজান মাস। আমাদের অনেকেই পানির অভাবে সময় মত ওজু গোসল করতে পারছে না। এখানে ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। টয়লেট আর টিউবওয়েলের জন্য আমরা অনেক কষ্টে আছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন বলেন, বেদে সম্প্রদায় ভাসমান একটি জনগোষ্টী হওয়ায় তাদেরকে সরকারী ভাবে তেমন কোন সহযোগিতা করা যাচ্ছেনা। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় তাদের মুখে ঈদের হাসি ফুটানোর চেষ্টা করবো।