কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, সমাজসেবক এবং দৈনিক কালবেলা পত্রিকার কটিয়াদী উপজেলা প্রতিনিধি বদরুল আলম (৩৫)–কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে কটিয়াদী পৌর শহরের নদীর বাঁধের পাশে বাদল মিয়ার চায়ের দোকান থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
বদরুল আলম জেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি শুধু জনপ্রিয় সমাজকর্মী নন, দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতাকেও পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। গণমাধ্যমে কাজ করার পাশাপাশি সমাজের নানা অসংগতি, দুর্নীতি, ও জনদুর্ভোগ নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন করে আসছিলেন তিনি।
বদরুল আলম কালবেলা পত্রিকার কটিয়াদী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর লেখালেখি বরাবরই ছিল সাহসী ও জনস্বার্থমূলক। এতে কখনো কখনো তিনি প্রশাসনের বা প্রভাবশালীদের বিরাগভাজনও হয়েছেন বলে জানান অনেক সহকর্মী।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি বদরুল আলম কটিয়াদী রক্তদান সমিতির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী টিম অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের জরুরি রক্ত জোগান দিয়ে বহু জীবন রক্ষা করেছে। তিনি কটিয়াদী পাবলিক লাইব্রেরি ও শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত।
এমন বহুমাত্রিক সমাজিক কর্মকাণ্ডের কারণেই রাজনৈতিক দলীয় পরিচয় ছাড়াই তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় জনগণের ভালোবাসা ও আস্থাই ছিল তাঁর প্রকৃত শক্তি।
তাঁর হঠাৎ গ্রেপ্তারের ঘটনায় কটিয়াদীতে সৃষ্টি হয়েছে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ। স্থানীয়রা বলছেন, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের এভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে ধরার প্রবণতা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক।
কটিয়াদী থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, “বদরুল আলমের বিরুদ্ধে কটিয়াদী থানায় কোনো মামলা নেই। সদর থানার একটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” কোন মামলায় তাঁকে সন্দেহভাজন করা হয়েছে—জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
বদরুল আলম নিজেই তাঁর ফেসবুক পোস্টে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়ে লিখেছেন, “কোনো মামলা ছাড়াই আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আল্লাহ ভরসা।”
স্থানীয় সাংবাদিক মহল, সুশীল সমাজ ও সাধারণ জনগণ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন—একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক, রক্তদাতা ও সমাজকর্মীকে কীভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া গ্রেপ্তার করা হলো? তাঁরা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
