নাটোরের সিংড়া উপজেলায় কৃষকরা পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করে নতুন এক কৃষি সংস্কৃতির সূচনা করেছেন। এই উদ্যোগটি বিশেষ করে তাদের জন্য যারা কম খরচে বেশি লাভের খোঁজে আছেন। কৃষকদের মধ্যে আদা চাষের এই পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে কম-বেশি প্রায় ৬৬ জন কৃষক এখন বস্তায় আদা চাষ করছেন। কৃষকদের মতে, এই পদ্ধতিতে চাষ করতে খরচ কম, এবং উৎপাদনের সম্ভাবনা বেশি। রাজিব হোসেন, একজন স্থানীয় কৃষক, জানান যে তিনি ১০০০ বস্তায় আদা চাষ করছেন। তিনি বলেন, “আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। মাটির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এবং রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম।”
বর্তমানে আদার বাজারমূল্য কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। কৃষকরা আশা করছেন, আদা উত্তোলনের সময় এটি ২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাদের লাভ হবে প্রায় ২ লাখ টাকা। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের জন্য এই নতুন পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতারও সুযোগ এনে দিয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রয়েল বলেন, “বস্তায় আদা চাষের সুবিধা হল, এতে জমির প্রয়োজন নেই এবং সহজেই মাটির মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়।” তিনি আরও জানান, কৃষকরা গোবর, খৈল এবং ছাই মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করছেন, যা পরিবেশবান্ধব।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ জানান, “আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। বাগানের আশেপাশের ছায়াযুক্ত জায়গা, পতিত জমিতে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা সম্ভব।”
এখন কৃষকরা আশা করছেন, বস্তায় আদা চাষে তারা কেবল খাদ্য চাহিদা পূরণই নয়, বরং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার পথও খুলবে। যদি স্থানীয় বাজারে আদার দাম স্থিতিশীল থাকে, তবে এই চাষ পদ্ধতি আরও কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, যদি কৃষকরা এই পদ্ধতিতে সফল হন, তবে আগামীতে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আদা চাষের পরিধি বাড়বে। কৃষকরা এমনকি এই উদ্যোগকে বড় পরিসরে উন্নীত করার পরিকল্পনাও করছেন, যা দেশের কৃষি উৎপাদনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
বস্তায় আদা চাষের এই নতুন প্রবণতা স্থানীয় কৃষকদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা সিংড়া উপজেলাকে একটি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করছে। কৃষি বিভাগের নানামুখী সহায়তা এবং কৃষকদের উদ্যমের ফলে এই উদ্যোগ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।