মোঃ শাহিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মাধাইপুর টু আড্ডা সড়কের পাশে অবৈধভাবে চলছে ইট-বালুর ব্যবসা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে ইট-বালু, যার ফলে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং পথচারী ও বাসিন্দাদের জীবনে সৃষ্টি হচ্ছে মারাত্মক ভোগান্তি। বালুর স্তূপ থেকে বাতাসে উড়ে আসা ধুলাবালু সড়ক ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, যা শ্বাসকষ্ট ও নানা স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের মাধাইপুর টু আড্ডা রাস্তার পাশের এলাকাগুলোতে বহুদিন ধরে অবৈধভাবে ইট-বালুর ব্যবসা চলছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায়, মূল সড়ক থেকে খুব কাছাকাছি, বালুর বড় বড় স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। এসব স্তূপে বালু অস্থায়ীভাবে রাখা হলেও, এসবের ওপর দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি, ট্রাক্টর ও ট্রলি বালু বহন করছে। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বালু ভর্তি ট্রাকের চালকরা কোনো ঢাকনা ব্যবহার না করেই এসব গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে বালু রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সড়কটি প্রায় পুরোপুরি বালুতে ঢেকে যায়, আর স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি হয়ে ওঠে এক ভোগান্তির কারণ।
বাতাসে উড়ে আসা ধুলাবালু শুধু সড়কটিই নয়, আশপাশের বাড়ির আঙ্গিনা, কৃষি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চলে যাচ্ছে। এর ফলে, রাস্তার ওপর চলাচলকারী পথচারী, মোটরসাইকেল আরোহী ও গাড়ির চালকদের অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে, স্থানীয় স্কুলশিক্ষার্থীরা পড়ছেন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাহিন আলী জানান, “দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তার পাশে বালুর ব্যবসা চলছে, কিন্তু কেউই এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মানুষ, পরিবেশ এবং রাস্তাঘাট সব কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালু যেভাবে উড়ে আসে, তাতে পথচলতি মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “তিনিও নিজের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন, বিশেষত বালু উড়ানোর কারণে।”
এক শিক্ষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, “স্কুলশিক্ষার্থী, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও অ্যালার্জির মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “এ বিষয়টি নিয়ে বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে, কিন্তু কেউ তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।”
অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম নিজেকে এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি জানান, “রাস্তার ওপর কিছু ইট-বালু রয়েছে, কিন্তু বাকিগুলো আমার নয়। রহনপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঠিকাদারদের মালামাল এসব।” তবে, যখন তার কাছ থেকে ঠিকাদারদের নাম জানতে চাওয়া হয়, তখন তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান এবং ফোনটি কেটে দেন।
পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, “আমরা মনিরুল ইসলামকে দুইদিন সময় দিয়েছি, যেন তিনি বালু এবং ইটগুলো সরিয়ে নেন। যদি সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব অপসারণ না করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির আরও মন্তব্য ছিল যে, তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও পরিবেশের স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করতে এই অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত আঞ্জুম অনন্যা জানিয়েছেন, “মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং থানার অফিসার ইনচার্জকে বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতি সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল বাসারও বলেন, “আমি নতুন এসেছি এবং এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত অবগত নই। তবে, আমি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুতই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য সহায়তা করব।”
এদিকে, এলাকাবাসী দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই অবৈধ ব্যবসার কারণে শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।
এখন প্রশ্ন হলো, প্রশাসন কি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে, নাকি এ সমস্যা আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকবে? স্থানীয়রা তার উত্তর চাইছেন।