সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন

আ.লীগ নেতার গোয়ালঘর থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ‘মানবিক সহায়তা’ হিসেবে প্রাপ্ত ত্রাণের ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ ও অসহায় পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত ও পুন:নির্মাণের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কথা।

অথচ অধিকাংশ বরাদ্দই পেয়েছেন পাকা ভবনের মালিক, রাজনৈতিক পরিবার ও ইউএনও কার্যালয়ের গাড়ির চালক, পিয়ন ও তাদের লোকজন। অনিয়ম ধরা পড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহেদুল ইসলাম মাদুর গোয়ালঘর থেকে টিন উদ্ধার করে আরেক দুঃস্থকে দিয়েছে ইউএনও।

এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৪০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণের জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। ওই বরাদ্দ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১৬ জনের নামে ২৪ বান্ডিল টিন ও প্রতি বান্ডিলে ৩ হাজার করে ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দগুলো থেকে ইউএনওর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত কয়েক ব্যক্তি অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টাকা ও টিনের কয়েকটি বরাদ্দ নেয়।

ঘটানাটি ফাঁস হয়ে গেলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তালিকার দুই নম্বরে থাকা মনির আহাম্মদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ড্রাইভার রাহাত হোসেনের বাবা। তিনি পেয়েছেন ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। তালিকার ৫ নম্বরে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী আমেনা বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের আলী খানের বাড়িতে। তাকে রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা।

তালিকার ৬ নম্বরে থাকা রাজিয়া সুলতানার স্বামী মায়েদুল ইসলাম মাদু আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড নেতা। তার বসতবাড়িটি পাকা ভবন হলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। টিনগুলো দিয়ে তার স্বামী গরু ঘরের চাল বানিয়েছেন।

৯ নম্বরে রয়েছেন পৌরসভার মধুপুর গ্রামের সামছুন নাহার। তার স্বামী মফিজ উল্যা সদস্য প্রবাস ফেরত। এখনো ৩ ছেলে প্রবাসে রয়েছেন। সুরম্য পাকা ভবনে বসবাস তাদের। তিনি ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা নেননি বলে জানিয়েছেন। একই কথা জানান তালিকার ১৩ নম্বরে থাকা খোকন চন্দ্র দাস। তিনিও টিন বা টাকার কথা জানেন না। অথচ তার নামেই উত্তোলন দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা ও ২ বান্ডিল টিন।

অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা মায়েদুল ইসলাম মাদু বলেন, আমার ছেলে রাকিবুল ইসলাম মাজেদ তদবির করে ইউএনও সাহেবের কাছ থেকে টিন ও টাকা বরাদ্দ এনেছেন। বসত ঘর পাকা হওয়ায় এগুলো দিয়ে গরু ঘরের চাল মেরামত করেছিলাম। ইউএনও জানতে পেরে টিনগুলো নিয়ে গেছে।

পৌরসভার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা সামছুন নাহার বলেন, আমার স্বামী সম্প্রতি প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন। তিন ছেলে এখনো প্রবাসেই রয়েছে। চরমোহনা ইউনিয়ন থেকে মধুপুরে জমি কিনে পাকা ভবন করে আমরা বসবাস করছি। স্থানীয় একজনের মাধ্যমে বন্যার সময় আমার আইডি কার্ডটি নেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ওই কার্ডটি দিয়ে ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মোবারক হোসেন ২ বান্ডিল টিন ও টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে।

সমাজকর্মী নাসির আল ইমরান বলেন, দুস্থদের ত্রাণের টিন ও টাকা ইউএনওর কাছের লোকজন হিসেবে পরিচিতদের মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়ার ঘটনা ফেসবুকে তুলে ধরায় আমাকে ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা গরীবের হক আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

রায়পুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল হাই খান বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগে বরাদ্দগুলো এসেছে। সাংবাদিকদের নিকট খবর পেয়ে যাচাই করে কয়েকটি অনিয়ম পাওয়া গেছে। এগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই বান টিন স্বচ্ছল পরিবার থেকে উদ্বার করা হয়েছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, অসহায় ও দুঃস্থদের মানবিক সহায়তা স্বচ্ছলদের পাওয়ার সুযোগ নেই। কয়েকজন লোককে বিশ্বাস করে বরাদ্দ দেওয়ায় এমনটি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহেদুল ইসলাম মাদুর বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে টিনগুলো উদ্ধার করে আরেকটি দুঃস্থ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা কয়েকটি নামের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। স্বচ্ছলদের নাম বাতিল করে ওই টিন ও টাকা উদ্ধার করে অস্বচ্ছলদের দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page